Monday, 23 November 2015

সপ্তম পর্ব : নানান রং-এ নানা কাঁথা সামগ্রী



বিভিন্ন রূপে কাঁথা শিল্পকে ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন দ্রবাদির সৃষ্টি। যেমন শীত বস্ত্র, চাদর, ঘর সাজানোর দ্রব, জুতো, ব্যাগ, ওরনা, শাড়ি, যন্ত্রপাতির কভার, বালিশের কভার, ওয়াল-হ্যানগিং, পার্স প্রভৃতি নানাবিধ দ্রব। নানান রং-এ নানান কাঁথার সামগ্রী আজ বর্তমান। 


চেয়ারের কভার 

চাদর 


পার্স 

ব্যাগ 


         
নকশি কাঁথা 


বালিশের কভার 


শাড়ি 


লেপ

জুতো





গিলাফ 





বটুয়া 









তথ্যসুত্র : 
৩. Nakshi Kantha Images.
৪. লোকশ্রুতি ( তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর )
৫. লোকজ শিল্প (বরুণকুমার চক্রবর্তী )

ষষ্ঠ পর্ব : বিপণন বাজারে কাঁথা শিল্পের অবস্থান

       লোকসংস্কৃতিতে সূচিশিল্পের অনবদ্য নিদর্শন রূপে উল্লেখযোগ্য উদাহরন হল কাঁথা শিল্প। কাঁথা শিল্প এক বিশেষ ধরনের শিল্পকলা যা একান্তভাবেই বাংলার মেয়েদের। দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে কাঁথা শিল্পের যোগ অবিচ্ছেদ্য। প্রতিদিনের ব্যবহারিক প্রয়োজনের ভিত্তিতে এই শিল্পের উদ্ভব ও বিকাশ। শিশুর লালন পালন, বিছানার লেপ-চাদর, রুমাল, জপের মালার থলে ও নানান দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহার সামগ্রীরূপে কাঁথাকে বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা হত। 

      কাঁথা শিল্প কখনই ব্যবসার উদ্দেশ্যে বিপণন শিল্প হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেনি। তবে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে  নিজেদের ব্যবহারের জন্য বা আপনজনকে উপহার দেওয়ার উদ্দেশ্যে কাঁথা সেলাই করিয়ে নেওয়ার প্রচলন ছিল। যত দিন যায় এই শিল্পের অবক্ষয় শুরু হয় । আধুনিক যন্ত্র চালিত বিভিন্ন সুচিশিল্পের ব্যবহারের প্রবনতা বাড়তে থাকে। কিন্তু কথাও যেন একটি আসার আলো আজও বর্তমান। যদিও কাঁথা শিল্প বিপণনের উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠেনি তবুও কিছু মানুসের চেষ্টায় কাঁথা শিল্প আজ বিপণন শিল্পরূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠান করেছে।
       মানুষের জীবনধারনের জীবকারূপে নিজের পরিচয় দিয়েছে। বুটিক শিল্পের  দুনিয়ায় এক নতুন অধ্যায় হল কাঁথা শিল্প। এবং এর সাথে যুক্ত আছে অসংখ্য কর্মচারীর যারা এই কাঁথা শিপ্লকেই জীবনধারনের জীবকারূপে গ্রহন করে এগিয়ে নিয়ে চলছে।

       বর্তমানে কেবলমাত্র বাংলার বাজারেই নয় দেশীয় বাজার এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও যথেষ্ট ভালো ভাবে প্রসার লাভ করেছে। পুরোপুরি নতুন ভাবে নতুন রূপে নিজের অস্থিত্ব প্রতিষ্ঠান করেছে। জামাকাপড় থেকে শুরু করে শীত বস্ত্র, চাদর, ঘর সাজানোর দ্রব, জুতো, ব্যাগ, ওরনা, শাড়ি, যন্ত্রপাতির কভার, বালিশের কভার, ওয়াল-হ্যানগিং, পার্স প্রভৃতি নানাবিধ দ্রবের ব্যবসায় কাঁথা শিল্প গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করছে। বানিজ্যিক বাজারে নিজের নাম প্রতিষ্ঠান করেছে। বৈদেশিক মুদ্রে অর্জনেও কাঁথা শিল্প গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করছে। 










  














তথ্যসুত্র : 
৩. Nakshi Kantha Images.
৪. লোকশ্রুতি ( তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর )
৫. লোকজ শিল্প (বরুণকুমার চক্রবর্তী )






  

পঞ্চম পর্ব : কাঁথাশিল্পে নকশি কাঁথা

      নকশি কাঁথা নামটি যখনই মনে আসে মনেপরে যায় "সাজু-রূপাই" এর কথা। কবি জসীমউদ্দীন-এর লেখা নকশি কাঁথার মাঠ কবিতাটি যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে। বাংলার কাঁথাশিল্পে এক অবিছিন্ন অংশ হল নকশি কাঁথা। নকশি কাঁথা এ দেশের লোকশিল্পের ভুবনে উল্লেখযোগ্য শিল্প-নৈপুন্যের স্বাক্ষর। নকশি কাঁথা বাংলার নারীসমাজের হাতে তৈরী এক অনবদ্য শিল্পকলা। হাজার হাজার বছর ধরে বাংলার মেয়েরা এই অতিহ্যবাহী শিল্পের চর্চা অব্যাহত রেখেছে।
নকশি কাঁথা
      কাঁথা তৈরীর উপকরণ নিতান্তই সামান্য। সাধারণত অব্যবহার্য ও পুরনো কাপড় সেলাই করে কাঁথা তৈরী হয়। কাঁথায় বিভিন্ন মটিফ বা নকশা ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন মটিফ বা নকশার মধ্যে রয়েছে চক্র, ফুল, লতা-পাতা, পশু-পাখি, জ্যামিতিক খোপ, সংসার জীবনের চিত্র, পৌরানিক কাহিনী চিত্র প্রভৃতি। সামান্য কিছু রঙিন সুত আর সাধারন কিছু পুরনো কাপড়কে ক্যানভাস মনে করে নানান কল্পনা চিত্র কে যেন জীবন্ত করে তোলে।

       ব্যবহারিক বিভিন্নতা ও আকৃতি অনুযায়ী কাঁথার নাম ভিন্ন ভিন্ন। যেমন আসন কাঁথা, সুজনী কাঁথা, লেপ কাঁথা, শিশুর কাঁথা, চাদর কাঁথা, পালকীর কাঁথা, আর্শীলতা কাঁথা, বোচকা কাঁথা, জায়নামাজ, পান প্যাকানী, দস্তরখান, গিলাফ প্রভৃতি। নকশি কাঁথা সেলাইয়ের ক্ষেত্রে দু'টি  প্রধান ধারার প্রচলন দেখা যায়।

১) যশোরের নকশি কাঁথা। 
  ২) রাজশাহীর নকশি কাঁথা। 

       যশোর-রীতির নকশি কাঁথাতিন শ্রেনীর। যথা- চিত্রিত কাঁথা, মটিফ কাঁথা ও পাইড় কাঁথা। রাজশাহীতে সেলাই করা হয় চার ধরনের কাঁথা। যথা- লাহরী কাঁথা, কার্পেট কাঁথা, কাঁথা ও লীফ কাঁথা। যশোর অঞ্চলের কাঁথাকে শীর্ষস্থানীয় বলে ধরা হয়। যশোরের নকশি কাঁথার ফোড় অত্যন্ত সুক্ষ্ম ও এতে ব্যবহৃত সুতোর রং রুচিসম্মত। 

      বহুকাল আগে থেকেই নকশি কাঁথা নিজেদের ব্যবহারের জন্য বা আপনজনকে উপহার দেওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরী করা হতো, বিক্রি হতো না। তবে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাঁথা সেলাই করিয়ে নেওয়ার প্রচলন ছিল। বর্তমানে শহরের কারু-বিপনীগুলোতে কাঁথা পণ্য হিসাবে ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। এমনকি বৈদেশিক বাজারেও আজকাল নকশি কাঁথার বিপণন হচ্ছে।



নকশি কাঁথা





তথ্যসুত্র : 
৩. Nakshi Kantha Images.
৪. লোকশ্রুতি ( তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর )
৫. লোকজ শিল্প (বরুণকুমার চক্রবর্তী )










চতুর্থ পর্ব : কাঁথার বিভিন্ন ধরন ও ব্যবহার (তৃতীয় খন্ড)

     রুমাল কাঁথা : এই ধরনের কাঁথা চৌকো মাপের হয় অর্থাৎ এটি লম্বা ও চওড়ায় এক ফুট মাপের হয়। ছোট চারকোনা টুকরো কাপড় দিয়ে তৈরী হয় এই কাঁথা। এটি রুমাল হিসাবে ব্যবহার হলেও ডিশ ঢাকার জন্যও ব্যবহার করা হয়।  এই ধরনের কাঁথায় প্রজাপতি, পদ্ম, কলকা, ফুল, লতা-পাতা, পাখি ইত্যাদি মটিফ লক্ষ করা যায়।
রুমাল কাঁথা 

    গিলাফ : কোরান শরীফের ঢাকনা হিসাবে ব্যবহার করা হয়। চৌকো নকশি কাঁথাকে বরফির মত রেখে তিন দিক একত্রিত করে সেলাই করা হয় এবং এক দিক খোলা রাখা হয়।
গিলাফ 

জায়নামাজ 
  জায়নামাজ : এইটি প্রার্থনা করার জন্য অর্থাৎ নামাজ পড়বার সময় ব্যবহার করা হয়। আকারে এইটি লম্বা ধরনের হয়। এতে ফুল, লতা-পাতা, গম্বুজ ও মিনারের মটিফ দেখা যায়।

     পান প্যাচানী : পান পেচিয়ে রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়। এইটির ব্যবহার নকশি থলি বা বগলির মতই।

আসন কাঁথা
     আসন কাঁথা : পুজোর কাজে এই ধরনের কাঁথা ব্যবহার করা হয়। এছাড়া এটি বর-কনে বা অতিথিদের বসার জন্যও ব্যবহার করা হয়। এই কাঁথার আকার চৌকো বা আয়েতকার উভয়ই হতে পারে। আবার কিছু আসন কাঁথা দেখাযায় যেগুলি একটু লম্বাটে ও বড় আকারের হয়।  পালকিতে বসার জন্যও এটি পেতে দেওয়া হয়। আবার কোনো সাধক বা পীর প্রার্থনা করার সময় এই কাঁথার ব্যবহার করেন। এতে রাধা-কৃষ্ণ, লক্ষ্মী, রথ ইত্যাদি মটিফ লক্ষ করা যায়। এই ধরনের কাঁথার ব্যবহৃত মটিফগুলি ধর্ম ও লোকজ বিশ্বাসবিষয়ক।

কবর বা মাজার কাঁথা 
      কবর বা মাজার কাঁথা : এই কাঁথা কবর বা মাজারের ঢাকনা হিসাবে ব্যবহার করা হয়। একে আবার চাদর কাঁথাও বলা হয়। এই ধরনের কাঁথায়  নানা ধরনের নকশা চিত্রিত হয়। 

      বইতন বা বস্তানী কাঁথা : বই খাতা জড়িয়ে রাখার জন্য এই ধরনের কাঁথা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি চার হাত মাপের চতুষ্কোণ ধরনের হয়। এই ধরনের কাঁথায় মানুষ পদ্ম, কলকা, ফুল, লতা-পাতা, পাখি ইত্যাদি বিভিন্ন মটিফ লক্ষ করা যায়।

      নকশি চাদর : গায়ে দেওয়ার জন্য শাল বা চাদর হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এতে নানা ধরনের নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়।  বিশেষত কলকা মটিফ এতে লক্ষ করা যায়। তবে দু-পাশের বর্ডার পাড়ের ডিজাইন এবং কোন কলকা বা মধ্যিখানে বুটির মত  ফুল বা লতা-পাতার ডিজাইন লক্ষ করা যায়। 


নকশি চাদর 
      এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কাঁথা লক্ষ করা যায়। যেমন - পাইড় কাঁথা, লাহরী কাঁথা, লীফ কাঁথা, গোলাপ বা ঢাকনি কাঁথা, পর্দা কাঁথা, সারিন্দা বা আবরণী কাঁথা প্রভৃতি। 




তথ্যসুত্র : 
৩. Nakshi Kantha Images.
৪. লোকশ্রুতি ( তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর )
৫. লোকজ শিল্প (বরুণকুমার চক্রবর্তী )



চতুর্থ পর্ব : কাঁথার বিভিন্ন ধরন ও ব্যবহার (দ্বিতীয় খন্ড)

আর্শিলতা
       আর্শিলতা : আর্শি, চিরুনি ও প্রসাধনসামগ্রী রাখার জন্য এই ধরনের কাঁথা ব্যবহার করা হয়। এই কাঁথা তৈরী হয় ২৪ ইঞ্চি সরু টুকরো কাপড় দিয়ে, আবার কোথাও এই কাঁথা লম্বায় এক ফুট ও চওড়ায় আধ ফুট মাপেরও হয়। এতে চাকফুল, ময়ুর, কদমগাছ, কৃষ্ণলীলা, চাঁদ-তারা ইত্যাদি মটিফের প্রাধান্য বেশি দেখা গেলেও এর মধ্যিখানে পদ্ম, কলকা বা বিভিন্ন ধরনের লতার নকশাও দেখা যায়। 


শিশুর কাঁথা
      শিশুর কাঁথা : শিশুদের শোওয়া ও গায়ে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় এই কাঁথা।  এই কাঁথা আকারে ছোট, অনেকটা তোয়ালের মত।  একে আবার "মুতনি" কাঁথাও বলা হয়। মাপের দিক থেকে এটি লম্বায় এবং চওড়ায় তিন ফুটের হয়।

 
 
 বর্তন ঢাকনি
   
বর্তন ঢাকনি : খাওয়ারের ঢাকনা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অতিথিদের খাবারের থালার উপর ঢাকনি স্বরূপও এই ধরনের কাঁথার ব্যবহার দেখা যায়। কোনো কোনো অঞ্চলে একে আবার "বেষ্টনী" বা "গাত্রী" কাঁথাও বলে।  



দস্তরখান
     দস্তরখান : অতিথিদের খাওয়ার সময় ফরাস বা পাতিতে এই কাঁথা বিছিয়ে দেওয়া হয়। আবার কখনও কখনও অতিথিদের খাওয়ার সময় সামনেও এই কাঁথা বিছিয়ে দেওয়া হয়। একে টেবিল ম্যাটও বলা যেতে পারে।


বগলি বা নকশি থলি
      বগলি বা নকশি থলি : এই ধরনের কাঁথার ব্যবহার হয় বিভিন্ন ধরনের থলি হিসাবে।  এটি লম্বায় দশ ইঞ্চি এবং চওড়ায় ছয় ইঞ্চি মাপের হয়। এই ধরনের থলিতে সাধারণত টাকা-পয়সা, পান-সুপারি, জপের বা তসবির মালা রাখা হয়। একে বৈরাগীর ঝোলা বা জপের থলেও বলা হয়। এটি আকারে খামের মত বা অনেকটা ছোট বটুয়ার মত দেখতে হয়। বাংলাদেশে এর নাম "খিচা "এবং পশ্চিমবঙ্গে এটি "দুর্জনী" নামে পরিচিত।


জোত্ বা বোচকা কাঁথা
    জোত্ বা বোচকা কাঁথা : জিনিসপত্র বাঁধার জন্য এই ধরনের কাঁথার ব্যবহার করা হয়। এই কাঁথায় নানান মটিফ দিয়ে ডিজাইন তোলা হয়। এই কাঁথার আকার চৌকো। কাপড়-চোপড় ও অন্যান্য টুকিটাকি জিনিসপত্র যাতে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে  ও বাঁধতে সুবিধা হয়। এই জন্য কাঁথা গুলি চৌকো আকৃতির হয়। 





তথ্যসুত্র : 
২. Culture of Bengal - Wikipedia, the free encyclopedia
৩. Nakshi Kantha Images.
৪. লোকশ্রুতি ( তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর )
৫. লোকজ শিল্প (বরুণকুমার চক্রবর্তী )

Saturday, 21 November 2015

চতুর্থ পর্ব : কাঁথার বিভিন্ন ধরন ও ব্যবহার (প্রথম খন্ড)

       বাংলার কাঁথা শিল্প মহিলাকুলের কল্পনা ও আকাঙ্ক্ষাকে প্রকাশ করে, শুধু  তাই নয় তাদের প্রিয় জনের প্রতি কমল হৃদয়বৃত্তি ও ভালোবাসা প্রকাশ করে। গ্রামাঞ্চলের নারীরা পাতলা কাপড়, প্রধানত পুরানো নানান রঙ এর কাপড়কে স্তরে স্তরে সাজিয়ে সাজিয়ে নানান রঙ এর সুত দিয়ে  সেলাই করে কাঁথা তৈরী করে থাকতেন। কাঁথা মিতব্যয়িতার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এখানে একাধিক পুরানো জিনিস একত্রিত করে একটি প্রয়োজনীয় নুন জিনিস তৈরী করা হয়।কাঁথার প্রাথমিক ব্যবহার ছিল এবং এখনও যা আছে তা হল শরীরকে গরম রাখা ও ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা করা। ব্যবহার ও আকার অনুযায়ী কাঁথা কে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।   

      সুজনি কাঁথা : অতিথিদের বসা বা শোওয়ার জন্য বিছানায় বিছিয়ে দেওয়া হয়।  এই কাঁথার দৈর্ঘ্য প্রায় ছয় ফুট এবং প্রস্ত প্রায় সাড়ে তিন ফুট হয়। এই কাঁথা আকারে বড় বলে এর কেন্দ্রবিন্দুতে পদ্মের মটিফ যেমন থাকে, তেমন পাড়ের ডিজাইন, কলকা, নানান লতা-পাতার ডিজাইনের বাহারও দেখা যায়। ঝিকরগাছায় এই কাঁথার নাম "নাছ্নি কাঁথা "। এই কাঁথায় ফুলের নকশা তোলা হয় পার্সিয়ান প্রভাবে। 
সুজনি কাঁথা

লেপ কাঁথা
লেপ কাঁথা : শীতের সময় গায়ে দেয়ার জন্য বেশ মোটা ধরনের কাঁথা। মাপেও এটি সুজনি কাঁথার চেয়ে লম্বা ও চওড়ায় কিছুটা বড়। এতেও নানা ধরনের নকশা তোলা হয়, তবে সুজনির তুলনায় কম।

     
ব্যটন বা ওয়াড় কাঁথা

ব্যটন বা ওয়াড় কাঁথা : বালিশের ঢাকনা হিসাবে ব্যবহার করা হয় এই ধরনের কাঁথা।  এই কাঁথার সাধরন মাপ হলো লম্বায় প্রায় দু-ফুট আর চওড়ায় প্রায় দের ফুট। এর দু-পাশে নানান লতা-পাতার ডিজাইন  কিংবা কোনো কলকার ডিজাইন বা অন্য কোনো ডিজাইন দেওয়া হয়। আবার লেপের ঢাকনা হিসেবেও এই কাঁথার ব্যবহার লক্ষ করা যায়। তবে সে ক্ষেতে লেপের ওয়াড় কাঁথা মাপে অনেক বড় হয়। এই কাঁথাকে আবার ব্যটন কাঁথাও বলা হয়। "বেষ্টনী" শব্দের অপভ্রংশ থেকেই বোধহয় "ব্যটন" শব্দটি এসেছে। 





তথ্যসুত্র : 
৪. লোকশ্রুতি ( তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর )
৫. লোকজ শিল্প (বরুণকুমার চক্রবর্তী )

Tuesday, 17 November 2015

তৃতীয় পর্ব : কাঁথা শিল্পের ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ


অবিভক্ত বাংলা
      ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ  অনুযায়ী  দেখতে গেলে অবিভক্ত বাংলা জুড়েই কাঁথা শিল্পের প্রসার ঘটেছিল। প্রকৃত অর্থে কাঁথা শিল্প হল বঙ্গনারীর শিল্পকলা। ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাকৃতিক এবং রাজনৈতিক ভুখন্ডের অন্তর্গত পর্বত ও তার পাদদেশ, মালভূমি, উপত্যকা, সমভূমি ব-দ্বীপ এবং অন্যান্য ভূমি গঠনের মধ্যে বাংলার সংস্কৃতি, এর কলা, নিজভাষা ও ধর্ম এবং গ্রন্থের প্রভাব অনুভব করা যায়। প্রাকৃতিক কারন বাংলায় বিভিন্ন শিল্পকলার জন্ম দিয়েছে। লোকশিল্পকলা হচ্ছে সাধারন ভাবে দেশের গ্রামীন মানুষের আশা এবং আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ। সাধারন ভাবে এই শিল্প দেশের মৃত্তিকায় গভীর ভাবে প্রোথিত এবং জনপ্রিয় বিশ্বাস ও রীতির সঙ্গে খুব নিবিড় ভাবে জড়িত। বাংলার ঐতিহ্যশালী শিল্প রূপে নিজেকে প্রকাশ করেছিল।

বিভক্ত  বাংলাদেশ 
          স্বাধীনতার পূর্ব অবিভক্ত বাংলায় কাঁথা শিল্পের যে প্রসার ঘটেছিল তা স্বাধীনতার পর বাংলার বিভক্ত হওয়ায় নানান দিক থেকে প্রভাবিত হয়েছে। পূর্ব বাংলা অর্থাৎ বাংলাদেশের রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা, যশোর, পুঠ্লা, নবাবগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, বরিশাল, মধুপুর প্রভৃতি অঞ্চলে  কাঁথা শিল্পের প্রসার ঘটে।

পশ্চিম বঙ্গ
          অপরদিকে ভারতের অন্তর্গত পশ্চিম বঙ্গের বীরভূমের বোলপুর অঞ্চল, পুরুলিয়া, নদীয়ার কৃষ্ণনগর অঞ্চল বসিরহাটের সেনপালা অঞ্চল, বারাসাত, কদম্বগাছি প্রভৃতি অঞ্চলে কাঁথা শিল্পের বিস্তার লক্ষ করা যায়। বর্তমানে পরিশীলিত ও অশীলিত পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ঐতিহ্যশালী শিল্পকলা এক অবক্ষয়ের পর্যায়ের মধে প্রবেশ করেছে। লোকশিল্প উপযুক্ত এবং সমবেদনাপুর্ন গ্রামীন শিল্পীর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ধীরে ধীরে ধ্বংস প্রাপ্ত  হয়ে অবলুপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে। 




তথ্যসুত্র : 
৪. লোকশ্রুতি ( তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর )
৫. লোকজ শিল্প (বরুণকুমার চক্রবর্তী )