বাংলার কাঁথা শিল্প মহিলাকুলের কল্পনা ও আকাঙ্ক্ষাকে প্রকাশ করে, শুধু তাই নয় তাদের প্রিয় জনের প্রতি কমল হৃদয়বৃত্তি ও ভালোবাসা প্রকাশ করে। গ্রামাঞ্চলের নারীরা পাতলা কাপড়, প্রধানত পুরানো নানান রঙ এর কাপড়কে স্তরে স্তরে সাজিয়ে সাজিয়ে নানান রঙ এর সুত দিয়ে সেলাই করে কাঁথা তৈরী করে থাকতেন। কাঁথা মিতব্যয়িতার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এখানে একাধিক পুরানো জিনিস একত্রিত করে একটি প্রয়োজনীয় নুন জিনিস তৈরী করা হয়।কাঁথার প্রাথমিক ব্যবহার ছিল এবং এখনও যা আছে তা হল শরীরকে গরম রাখা ও ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা করা। ব্যবহার ও আকার অনুযায়ী কাঁথা কে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
সুজনি কাঁথা : অতিথিদের বসা বা শোওয়ার জন্য বিছানায় বিছিয়ে দেওয়া হয়। এই কাঁথার দৈর্ঘ্য প্রায় ছয় ফুট এবং প্রস্ত প্রায় সাড়ে তিন ফুট হয়। এই কাঁথা আকারে বড় বলে এর কেন্দ্রবিন্দুতে পদ্মের মটিফ যেমন থাকে, তেমন পাড়ের ডিজাইন, কলকা, নানান লতা-পাতার ডিজাইনের বাহারও দেখা যায়। ঝিকরগাছায় এই কাঁথার নাম "নাছ্নি কাঁথা "। এই কাঁথায় ফুলের নকশা তোলা হয় পার্সিয়ান প্রভাবে।
![]() |
সুজনি কাঁথা |
![]() |
লেপ কাঁথা |
লেপ কাঁথা : শীতের সময় গায়ে দেয়ার জন্য বেশ মোটা ধরনের কাঁথা। মাপেও এটি সুজনি কাঁথার চেয়ে লম্বা ও চওড়ায় কিছুটা বড়। এতেও নানা ধরনের নকশা তোলা হয়, তবে সুজনির তুলনায় কম।
![]() |
ব্যটন বা ওয়াড় কাঁথা |
ব্যটন বা ওয়াড় কাঁথা : বালিশের ঢাকনা হিসাবে ব্যবহার করা হয় এই ধরনের কাঁথা। এই কাঁথার সাধরন মাপ হলো লম্বায় প্রায় দু-ফুট আর চওড়ায় প্রায় দের ফুট। এর দু-পাশে নানান লতা-পাতার ডিজাইন কিংবা কোনো কলকার ডিজাইন বা অন্য কোনো ডিজাইন দেওয়া হয়। আবার লেপের ঢাকনা হিসেবেও এই কাঁথার ব্যবহার লক্ষ করা যায়। তবে সে ক্ষেতে লেপের ওয়াড় কাঁথা মাপে অনেক বড় হয়। এই কাঁথাকে আবার ব্যটন কাঁথাও বলা হয়। "বেষ্টনী" শব্দের অপভ্রংশ থেকেই বোধহয় "ব্যটন" শব্দটি এসেছে।
তথ্যসুত্র :
৪. লোকশ্রুতি ( তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর )
৫. লোকজ শিল্প (বরুণকুমার চক্রবর্তী )
৫. লোকজ শিল্প (বরুণকুমার চক্রবর্তী )
No comments:
Post a Comment