Monday, 23 November 2015

পঞ্চম পর্ব : কাঁথাশিল্পে নকশি কাঁথা

      নকশি কাঁথা নামটি যখনই মনে আসে মনেপরে যায় "সাজু-রূপাই" এর কথা। কবি জসীমউদ্দীন-এর লেখা নকশি কাঁথার মাঠ কবিতাটি যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে। বাংলার কাঁথাশিল্পে এক অবিছিন্ন অংশ হল নকশি কাঁথা। নকশি কাঁথা এ দেশের লোকশিল্পের ভুবনে উল্লেখযোগ্য শিল্প-নৈপুন্যের স্বাক্ষর। নকশি কাঁথা বাংলার নারীসমাজের হাতে তৈরী এক অনবদ্য শিল্পকলা। হাজার হাজার বছর ধরে বাংলার মেয়েরা এই অতিহ্যবাহী শিল্পের চর্চা অব্যাহত রেখেছে।
নকশি কাঁথা
      কাঁথা তৈরীর উপকরণ নিতান্তই সামান্য। সাধারণত অব্যবহার্য ও পুরনো কাপড় সেলাই করে কাঁথা তৈরী হয়। কাঁথায় বিভিন্ন মটিফ বা নকশা ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন মটিফ বা নকশার মধ্যে রয়েছে চক্র, ফুল, লতা-পাতা, পশু-পাখি, জ্যামিতিক খোপ, সংসার জীবনের চিত্র, পৌরানিক কাহিনী চিত্র প্রভৃতি। সামান্য কিছু রঙিন সুত আর সাধারন কিছু পুরনো কাপড়কে ক্যানভাস মনে করে নানান কল্পনা চিত্র কে যেন জীবন্ত করে তোলে।

       ব্যবহারিক বিভিন্নতা ও আকৃতি অনুযায়ী কাঁথার নাম ভিন্ন ভিন্ন। যেমন আসন কাঁথা, সুজনী কাঁথা, লেপ কাঁথা, শিশুর কাঁথা, চাদর কাঁথা, পালকীর কাঁথা, আর্শীলতা কাঁথা, বোচকা কাঁথা, জায়নামাজ, পান প্যাকানী, দস্তরখান, গিলাফ প্রভৃতি। নকশি কাঁথা সেলাইয়ের ক্ষেত্রে দু'টি  প্রধান ধারার প্রচলন দেখা যায়।

১) যশোরের নকশি কাঁথা। 
  ২) রাজশাহীর নকশি কাঁথা। 

       যশোর-রীতির নকশি কাঁথাতিন শ্রেনীর। যথা- চিত্রিত কাঁথা, মটিফ কাঁথা ও পাইড় কাঁথা। রাজশাহীতে সেলাই করা হয় চার ধরনের কাঁথা। যথা- লাহরী কাঁথা, কার্পেট কাঁথা, কাঁথা ও লীফ কাঁথা। যশোর অঞ্চলের কাঁথাকে শীর্ষস্থানীয় বলে ধরা হয়। যশোরের নকশি কাঁথার ফোড় অত্যন্ত সুক্ষ্ম ও এতে ব্যবহৃত সুতোর রং রুচিসম্মত। 

      বহুকাল আগে থেকেই নকশি কাঁথা নিজেদের ব্যবহারের জন্য বা আপনজনকে উপহার দেওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরী করা হতো, বিক্রি হতো না। তবে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাঁথা সেলাই করিয়ে নেওয়ার প্রচলন ছিল। বর্তমানে শহরের কারু-বিপনীগুলোতে কাঁথা পণ্য হিসাবে ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। এমনকি বৈদেশিক বাজারেও আজকাল নকশি কাঁথার বিপণন হচ্ছে।



নকশি কাঁথা





তথ্যসুত্র : 
৩. Nakshi Kantha Images.
৪. লোকশ্রুতি ( তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর )
৫. লোকজ শিল্প (বরুণকুমার চক্রবর্তী )










No comments:

Post a Comment